বিবিসি'র অভিজ্ঞ বিশ্ব বিষয়ক সম্পাদক জন সিম্পসন বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ২০২৫ সাল তার প্রায় ছয় দশকের কর্মজীবনে দেখা যেকোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন। তিনি বিশ্বজুড়ে ৪০টির বেশি যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন। সিম্পসন একাধিক বড় সংঘাতের একত্র হওয়া এবং তাদের মধ্যে অন্তত একটির ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
সিম্পসনের এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন পূর্ব ইউরোপে উত্তেজনা বাড়ছে এবং ইউক্রেনে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করেছেন যে এই সংঘাত বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে, সিম্পসনও একই মত পোষণ করেন। সিম্পসন বলেন, "প্রায় ৬০ বছর ধরে সংঘাত পর্যবেক্ষণ করার পর, আমার মনে হচ্ছে তিনি ঠিক বলছেন।"
আন্তর্জাতিক মহল ইউক্রেনের বাইরে রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ন্যাটো সরকারগুলো বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন রাশিয়া কর্তৃক পশ্চিমা দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক যোগাযোগ বহনকারী সমুদ্রের তলদেশের কেবলগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর সম্ভাবনা নিয়ে। রাশিয়ার ড্রোনগুলো ন্যাটো দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে, এবং পশ্চিমা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত যে রুশ হ্যাকাররা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জরুরি পরিষেবা এবং বৃহৎ কর্পোরেশনগুলোকে ব্যাহত করার পদ্ধতি তৈরি করছে।
সিম্পসনের কর্মজীবন স্নায়ুযুদ্ধ, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং অসংখ্য আঞ্চলিক সংঘাতের সাক্ষী। তার বিস্তৃত অভিজ্ঞতা বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি অনন্য দৃষ্টিকোণ দেয়। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার পুনরুত্থান দ্বারা চিহ্নিত, যেখানে রাশিয়া তার প্রভাব পুনরুদ্ধার এবং বিদ্যমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইছে। এর ফলে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং কৌশলগত জোটের উপর নতুন করে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।
ইউক্রেনের সংঘাত এই প্রবণতাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যার ফলে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে গেছে। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিণতি হয়েছে, এবং এই সংঘাত ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভুল বোঝাবুঝি বা অনিচ্ছাকৃত পরিণতির ঝুঁকির সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা এখনও একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়।
এই সংঘাতগুলোর ভবিষ্যৎ গতিপথ এবং বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্ধারণে আগামী মাসগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে, তবে চ্যালেঞ্জগুলো অনেক। বিশ্ব দম বন্ধ করে এই ঘটনাগুলো দেখছে, এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলা সংকটগুলোর দ্রুত এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা করছে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment