মিয়ানমারের প্রধান সামরিকপন্থী দল, ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি), দেশটির সামরিক শাসকদের দ্বারা আয়োজিত নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির দাবি করেছে। এএফপি অনুসারে, ইউএসডিপি-র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে প্রথম দফার ভোটগ্রহণের পর দলটি আইনসভার নিম্নকক্ষে ১০২টি আসনের মধ্যে ৮২টি আসনে জয়লাভ করেছে।
তবে এই নির্বাচন সমালোচিত হয়েছে, যেখানে অনেকে মনে করছেন যে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এই ভোট শাসক দলের ক্ষমতাকে আরও সুসংহত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। দেশজুড়ে ৬৫টি টাউনশিপে ভোট বাতিল করা হয়েছে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলকতা নিয়ে আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আরও দুটি রাউন্ডের ভোটগ্রহণ ১১ জানুয়ারি এবং ২৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে এই নির্বাচনই প্রথম। এই অভ্যুত্থানের ফলে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং একটি অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যার জবাবে সামরিক বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে। সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট ইউএসডিপি ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মিয়ানমার শাসন করেছিল, পরবর্তীতে সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কাছে ক্ষমতা হারায়।
সমালোচকরা বলছেন যে সামরিক জান্তার তত্ত্বাবধানে বর্তমান নির্বাচনী কাঠামোর বৈধতা নেই। এনএলডি, যারা ২০২০ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছিল, তাদের বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং এর অনেক নেতা ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা তারা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও স্বচ্ছতার অভাব এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর আরোপিত বিধিনিষেধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই নির্বাচনের ফলাফল সম্ভবত মিয়ানমারের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ইউএসডিপি যদি তাদের এই অগ্রগতি ধরে রাখতে পারে, তবে এটি দেশের উপর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণকে আরও দৃঢ় করবে এবং সম্ভবত চলমান সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, অনেক দেশ গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন এবং রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। সামগ্রিক ফলাফল এবং মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্ধারণে পরবর্তী দফার ভোটগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment