প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তি শিল্পের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পরে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এমন কিছু নীতি প্রণয়ন করেছেন যা প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে বিশেষভাবে সুবিধা দেয়, শিল্প বিশ্লেষক এবং সরকারি নথিপত্র অনুসারে। এই নীতি পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিপ রপ্তানির ওপরের বিধিনিষেধ শিথিল করা, ডেটা সেন্টার নির্মাণের অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির অনুকূলে আইন প্রণয়নকে সমর্থন করা।
এই পরিবর্তনটি আসে সেই সময়ের পরে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মেটাকে ভেঙে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন, অ্যাপলের সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রভাব ফেলে এমন শুল্ক আরোপ করেছিলেন এবং Nvidia-এর মতো কোম্পানি থেকে এআই চিপ রপ্তানি সীমিত করেছিলেন। এই প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর কারণে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল যে প্রযুক্তি শিল্পের পক্ষ থেকে অভিষেক অনুষ্ঠানে অনুদান এবং বৈঠকের মাধ্যমে প্রশাসনকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা সফল হবে না।
তবে গ্রীষ্মের পর থেকে প্রশাসন তার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে পরিবর্তন করেছে। এআই চিপ রপ্তানির ওপর থেকে অনেক বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, যা Nvidia-এর মতো কোম্পানিগুলোকে তাদের উন্নত প্রযুক্তি বৃহত্তর বিশ্ব বাজারে বিক্রি করতে দিচ্ছে। এই পদক্ষেপ সরাসরি Nvidia-কে উপকৃত করবে, যাদের উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন চিপ এআই বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন ডেটা সেন্টারগুলোর নির্মাণ কাজ দ্রুত করেছে, যা এআই প্রযুক্তির বিকাশ এবং স্থাপনার জন্য অপরিহার্য। এই ডেটা সেন্টারগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো প্রয়োজন, এবং সুবিন্যস্ত অনুমোদন প্রক্রিয়া প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য খরচ কমায় এবং সময়সীমা ত্বরান্বিত করে।
এই মাসে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজ্য-স্তরের এআই বিধিবিধানগুলিকে অগ্রাহ্য করে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যা প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। তাদের যুক্তি ছিল যে রাজ্য আইনগুলোর একটি মিশ্রণ উদ্ভাবনকে ব্যাহত করবে। এই আদেশ কার্যকরভাবে ফেডারেল স্তরে এআই নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্রীভূত করে, যা শিল্পের জন্য আরও অভিন্ন এবং অনুমানযোগ্য আইনি কাঠামো তৈরি করে। উপরন্তু, প্রশাসন চীনের কাছে আরও শক্তিশালী Nvidia চিপ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে, যা অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের ভারসাম্য রক্ষা করে।
সেন্টার ফর ডিজিটাল ইনোভেশন-এর প্রযুক্তি নীতি বিশ্লেষক সারাহ মিলার বলেন, "এটি প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি স্পষ্ট বিজয়। এই নীতি পরিবর্তনগুলো খরচ কমাবে, বাজারের সুযোগ বাড়াবে এবং প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য বৃহত্তর নিয়ন্ত্রক নিশ্চয়তা প্রদান করবে।"
ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া প্রাথমিক কঠোর অবস্থানটি মূলত ডেটা গোপনীয়তা, বাজারের প্রতিযোগিতা এবং ভুল তথ্যের বিস্তার সম্পর্কিত বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ক্ষমতা এবং প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের কারণে ছিল। তবে, সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনগুলো কৌশল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, সম্ভবত অর্থনৈতিক বিবেচনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার জন্য প্রযুক্তি শিল্পের গুরুত্বের স্বীকৃতি থেকে চালিত।
এই নীতি পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনও দেখার বিষয়। সমালোচকরা বলছেন যে প্রশাসন সম্ভবত বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর স্বার্থকে জনগণের মঙ্গলের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা বাজারের কেন্দ্রীকরণ এবং এআই-এর নৈতিক প্রভাব সম্পর্কে বিদ্যমান উদ্বেগগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। সমর্থকরা, তবে, মনে করেন যে এই নীতিগুলো উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে এবং মূল প্রযুক্তিগত খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। এই নীতিগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং প্রযুক্তি শিল্প ও বৃহত্তর অর্থনীতির ওপর এর চূড়ান্ত প্রভাব কী হবে তা নির্ধারণে আগামী কয়েক মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment