বাতাসে সম্ভাবনার গুঞ্জন, শুধু অত্যাধুনিক এআই মডেলগুলোকে শক্তি যোগানো সার্ভার ফার্মগুলোতে নয়, নতুন প্রজন্মের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতেও। গ্যারেজ এবং ডর্ম রুমের কথা ভুলে যান; আজকের টেক টাইটানদের জন্মস্থান সম্ভবত ডেটা সেন্টার এবং গবেষণা ল্যাব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান কেবল শিল্পগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে না; এটি ডট-কম যুগের পর সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বিলিয়নিয়ার তৈরি করছে, যদিও এর ভিত্তি আরও অনেক বেশি বাস্তব।
যদিও এনভিডিয়ার জেনসেন হুয়াং এবং ওপেনএআই-এর স্যাম অল্টম্যানের মতো নামগুলো এআই-এর অগ্রগতির প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে, তাদের ইতিমধ্যে অর্জিত বিশাল সম্পদ আরও বেড়েছে। আসল গল্পটি নতুন মুখগুলোর উত্থানে নিহিত, সেই ব্যক্তিরা যারা বুদ্ধিমান মেশিনের প্রতিশ্রুতিতে সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন। এঁরা হলেন এআই-ফার্স্ট কোম্পানিগুলোর প্রতিষ্ঠাতা, সেই ব্যক্তিরা যারা কেবল স্রোতে গা ভাসাচ্ছেন না, বরং এর গতিপথকে সক্রিয়ভাবে রূপ দিচ্ছেন।
স্কেল এআই-এর পেছনের জুটি আলেকজান্ডার ওয়াং এবং লুসি গুওর কথা ভাবুন। তাদের কোম্পানি, একসময়কার দুর্বল স্টার্টআপ, এখন এআই ইকোসিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। স্কেল এআই ডেটা লেবেলিংয়ের প্রায়শই উপেক্ষিত, তবুও গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে। এআই মডেলগুলো কেবল সেই ডেটার মতোই ভালো যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে এগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, এবং স্কেল এআই ডেটা নির্ভুল, সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য হিউম্যান-ইন-দ্য-লুপ অবকাঠামো সরবরাহ করে। জুনে মেটার ১৪.৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ স্কেল এআই-এর কাজের কৌশলগত গুরুত্বকে তুলে ধরে। এরপর রয়েছে কার্সরের দল – মাইকেল ট্রুয়েল, সুয়ালেহ আসিফ, আমান সাঙ্গের এবং আরভিড লুনেমার্ক – যারা এআই দিয়ে কোডিংয়ে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন। তাদের কোম্পানির সাম্প্রতিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের মূল্যায়ন এআই-সহায়তাযুক্ত সফটওয়্যার উন্নয়নের সম্ভাবনা সম্পর্কে অনেক কিছু বলে।
কিন্তু এই কোম্পানিগুলো আসলে কী করছে, এবং কেন তারা এত আকাশছোঁয়া মূল্যায়ন পাচ্ছে? এর উত্তরটি নিহিত রয়েছে এআই বিভিন্ন সেক্টরে যে মৌলিক পরিবর্তন আনছে তার মধ্যে। উদাহরণস্বরূপ, পারপ্লেক্সিটি এআই দিয়ে অনুসন্ধানকে নতুন করে কল্পনা করছে, ঐতিহ্যবাহী সার্চ ইঞ্জিনগুলোর চেয়ে আরও সংক্ষিপ্ত এবং প্রাসঙ্গিকভাবে উপযুক্ত উত্তর সরবরাহ করছে। মার্কার ডেটা বিশ্লেষণের জন্য এআই ব্যবহার করছে, ব্যবসাগুলোকে বিশাল ডেটাসেট থেকে কার্যকরী অন্তর্দৃষ্টি বের করতে সহায়তা করছে। ফিগার এআই হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করছে, যার লক্ষ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে লজিস্টিকস পর্যন্ত শিল্পগুলোতে বিপ্লব ঘটানো। সেইফ সুপারইন্টেলিজেন্স এআই সুরক্ষার জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, যাতে ভবিষ্যতের এআই সিস্টেমগুলো মানুষের মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। হার্ভে এআই-চালিত আইনি সফটওয়্যার দিয়ে আইনি পেশাকে রূপান্তরিত করছে, যেখানে থিংকিং মেশিনস ল্যাব এআই গবেষণার সীমানা প্রসারিত করছে।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একজন শীর্ষস্থানীয় এআই গবেষক ডঃ এমিলি কার্টার ব্যাখ্যা করেন, "আমরা এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর একটি ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণ দেখছি।" "অন্তর্নিহিত প্রযুক্তিটি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে এটি বিস্তৃত সমস্যাগুলোতে প্রয়োগ করা যেতে পারে, এবং এটি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রচুর সুযোগ তৈরি করছে।" তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, উন্নয়নের দ্রুত গতি চ্যালেঞ্জও তৈরি করে। "আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এআই যেন দায়িত্বশীলতার সাথে তৈরি এবং প্রয়োগ করা হয়, এবং এর নৈতিক ও সামাজিক প্রভাবগুলো ভালোভাবে বিবেচনা করা হয়।"
এই নতুন এআই বিলিয়নিয়ারদের উত্থান প্রযুক্তি এবং সমাজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে। তাদের কোম্পানিগুলো কি সত্যিই তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে? এআই-এর সুবিধাগুলো কি ব্যাপকভাবে ভাগ করা হবে, নাকি এগুলো প্রাথমিকভাবে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের কাছে জমা হবে? এবং এআই-এর উন্নয়ন ও প্রয়োগকে রূপ দিতে সরকার এবং নিয়ন্ত্রকদের ভূমিকা কী হবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনো নিশ্চিত নয়, তবে একটি বিষয় স্পষ্ট: এআই-এর উত্থান কেবল একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লব নয়; এটি একটি সামাজিক বিপ্লব। এবং যারা আজ এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারাই সম্ভবত আগামী দিনের বিশ্বকে রূপ দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। ঝুঁকি অনেক বেশি, এবং বিশ্ব তাকিয়ে আছে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment