২০২৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি (NIST)-এর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, পৃথিবীর চেয়ে মঙ্গলে সময় দ্রুত চলে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটি প্রমাণ করে যে, মঙ্গলের ঘড়িগুলো পৃথিবীর চেয়ে সামান্য দ্রুত চলে এবং মঙ্গল গ্রহে বছরজুড়ে এর হেরফের হয়।
সময়ের এই পার্থক্য যদিও মাইক্রো সেকেন্ডে মাপা হয়, তবুও ভবিষ্যৎ মঙ্গল অভিযানে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে নেভিগেশন, যোগাযোগ এবং সৌরজগৎ জুড়ে ইন্টারনেট তৈরি করা। NIST-এর প্রধান গবেষক ডঃ এমিলি কার্টার বলেন, "এটি সময়ের সামান্য ব্যবধান হলেও মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য এর বড় প্রভাব রয়েছে।"
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে, সময় আপেক্ষিক এবং এটি মাধ্যাকর্ষণ ও গতির উপর নির্ভরশীল। যেহেতু মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর চেয়ে কম, তাই লাল গ্রহে সময় সামান্য দ্রুত চলে। NIST দল অত্যাধুনিক অ্যাটমিক ক্লক এবং জটিল হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে এই পার্থক্যটি সঠিকভাবে পরিমাপ করেছে। দলটি মঙ্গলের উপবৃত্তাকার কক্ষপথের বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়েছে, যা সূর্যের থেকে এর দূরত্বের তারতম্য ঘটায় এবং সময়ের গতিকে প্রভাবিত করে।
এই আবিষ্কারের তাৎপর্য মহাকাশ ভ্রমণ এবং যোগাযোগের ব্যবহারিক দিক পর্যন্ত বিস্তৃত। উদাহরণস্বরূপ, মহাকাশযানের নেভিগেশন সঠিক সময়ের উপর নির্ভর করে। পৃথিবী এবং মঙ্গলের মধ্যে সময়ের পার্থক্য সঠিকভাবে হিসাব করা না হলে, নেভিগেশনে ত্রুটি হতে পারে, যার ফলে মহাকাশযান তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে পারে।
তাছাড়া, সৌরজগৎ জুড়ে একটি ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরি করতে হলে বিভিন্ন গ্রহের মধ্যে ঘড়িগুলোর অত্যন্ত নির্ভুল সিঙ্ক্রোনাইজেশন প্রয়োজন হবে। পৃথিবী ও মঙ্গলের মধ্যে সময়ের প্রসারণের প্রভাব নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য ক্রমাগত সংশোধন করতে হবে। ডঃ কার্টার ব্যাখ্যা করেন, "কল্পনা করুন আপনি মঙ্গল থেকে একটি ভিডিও স্ট্রিম করার চেষ্টা করছেন এবং টাইমিং কয়েক মিলি সেকেন্ডের জন্যেও যদি ভুল হয়, তাহলে সেই অভিজ্ঞতা ব্যবহারযোগ্য হবে না।"
বর্তমানে, পৃথিবী সঠিক সময় ধরে রাখার জন্য অত্যাধুনিক অ্যাটমিক ক্লক, GPS স্যাটেলাইট এবং উচ্চ-গতির যোগাযোগ নেটওয়ার্কের একটি জটিল বৈশ্বিক ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। এই স্তরের নির্ভুলতা মঙ্গলে নিয়ে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। NIST নতুন অ্যাটমিক ক্লক তৈরি করার জন্য কাজ করছে, যা বিশেষভাবে মহাকাশে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং মঙ্গলের প্রতিকূল পরিবেশ সহ্য করতে পারবে। "মার্সটাইম" (MarsTime) নামের এই ঘড়িগুলো বিদ্যমান মহাকাশ-ভিত্তিক অ্যাটমিক ক্লকের চেয়ে বেশি নির্ভুল এবং স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই গবেষণা মহাকাশ অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেয়। যেহেতু আরও বেশি দেশ এবং বেসরকারি সংস্থা মঙ্গলে অভিযান পাঠাচ্ছে, তাই লাল গ্রহের জন্য একটি সাধারণ সময় মান প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে সমস্ত মহাকাশযান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সিঙ্ক্রোনাইজ করা হয়েছে, যা সম্ভাব্য সংঘাত প্রতিরোধ করবে এবং কার্যকারিতা সর্বাধিক করবে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন বর্তমানে একটি মানসম্পন্ন মঙ্গলীয় সময় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে, যা মহাকাশগামী সমস্ত দেশ গ্রহণ করতে পারে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment