সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত একটি সরকারি বিবৃতি অনুসারে, ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলার পর ইয়েমেন থেকে তার সমস্ত সন্ত্রাস দমন ইউনিট প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপটি দুটি উপসাগরীয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এসেছে, যেখানে রিয়াদ আবুধাবিকে ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য অস্ত্র ও সামরিক যান সরবরাহের অভিযোগ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলাগুলো একটি বন্দর সুবিধাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল যা সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃক বিচ্ছিন্নতাবাদী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি)-কে সামরিক সহায়তা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এসটিসি ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, এবং এই সরকার সৌদি আরব কর্তৃক সমর্থিত। এই ঘটনাটি সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে, যারা একসময় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউএই কর্মকর্তা বলেছেন, "আমাদের সন্ত্রাস দমন বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যার লক্ষ্য ইয়েমেনি সংঘাতের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন করে সাজানো।" "আমরা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে আমরা বিশ্বাস করি যে এখন একটি ভিন্ন কৌশল প্রয়োজন।"
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই প্রত্যাহার ইয়েমেনে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কৌশলগত লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভিন্নতাকে প্রতিফলিত করে। সৌদি আরব যেখানে হুতি বিদ্রোহীদের দমনে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, যারা ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্রমবর্ধমানভাবে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবেলা এবং দক্ষিণে এসটিসিকে সমর্থন করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই ভিন্নতার কারণে দুটি দেশের মধ্যে friction এবং mistrust সৃষ্টি হয়েছে।
২০১৫ সালে শুরু হওয়া ইয়েমেনের সংঘাত বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটগুলোর মধ্যে একটি তৈরি করেছে। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, যুদ্ধ, রোগ এবং অনাহারে কয়েক লক্ষ মানুষ মারা গেছে। ইউএই-এর সৈন্য প্রত্যাহার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে, সম্ভবত এসটিসিকে আরও সাহসী করে তুলবে এবং সরকারি বাহিনীর সাথে নতুন করে সংঘর্ষের দিকে পরিচালিত করবে।
সানা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ইয়েমেন বিশেষজ্ঞ ড. আয়েশা আল-মাহরি বলেছেন, "এই প্রত্যাহার দক্ষিণ ইয়েমেনে একটি ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি করতে পারে, যা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্বারা কাজে লাগানো হতে পারে।" "এটা জরুরি যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ যেন উত্তেজনা হ্রাস করাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে কাজ করে।"
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট এখনও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, জোটের ভেতরের সূত্রগুলো হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন হস্তক্ষেপের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত রয়ে গেছে, এবং সংঘাতের একটি মীমাংসার জন্য ক্রমবর্ধমান আহ্বান জানানো হচ্ছে। পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল, এবং আগামী দিনে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব উভয়ের কাছ থেকে আরও ঘোষণা আশা করা হচ্ছে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment