জলবায়ু প্রযুক্তি শিল্পের শোকসংবাদ লেখার জন্য হতাশাবাদীরা তাদের কলম শানিয়ে প্রস্তুত ছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাবর্তনের হাত ধরে জলবায়ু নীতিগুলো ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম এবং এমনকি ইউরোপের নমনীয় মনোভাবের কারণে ২০২৫ সাল ছিল বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। তবে বছর শেষের দিকে একটি অপ্রত্যাশিত চিত্রনাট্য দেখা যাচ্ছে: জলবায়ু প্রযুক্তি কেবল টিকে থাকছে না, বরং নিজের জায়গা ধরে রেখেছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ একেবারে মুখ থুবড়ে না পড়ে বরং ২০১৪ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল রয়েছে, যা বড় ধরনের পতনের প্রত্যাশাকে ভুল প্রমাণ করেছে।
এই স্থিতিশীলতা কোনো অন্ধ ভাগ্যের ফল নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমাগত ধাক্কা সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করছে। তবে সম্ভবত আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অনেক জলবায়ু প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। এগুলো সস্তা, আরও বেশি কার্যকর এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে ভালো হয়ে উঠছে। সৌর, বায়ু এবং ব্যাটারি প্রযুক্তির নাটকীয় মূল্য হ্রাস পুরো খাতের জন্য শক্তিশালী অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।
সৌর প্যানেলের দামের পতন বিবেচনা করুন। মাত্র এক দশক আগে সৌরশক্তি ছিল একটি বিশেষায়িত উৎস, যা প্রায়শই ভর্তুকিযুক্ত ছিল এবং নির্দিষ্ট কিছু স্থানে অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর ছিল। আজ, ইউটিলিটি-স্কেল সৌরবিদ্যুৎ প্রায়শই নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে সস্তা মাধ্যম, এমনকি ভর্তুকি ছাড়াও। এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে উপকরণ বিজ্ঞান, উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং স্থাপন কৌশলের ক্ষেত্রে নিরলস উদ্ভাবন। ফার্স্ট সোলারের মতো সংস্থাগুলো তাদের থিন-ফিল্ম সৌর প্যানেল দিয়ে ক্রমাগত দক্ষতা এবং ব্যয়-কার্যকারিতার সীমানা প্রসারিত করছে।
ব্যাটারি বিপ্লবও একইভাবে পরিবর্তন আনছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি), যা একসময় বিলাসবহুল পণ্য ছিল, তা এখন ক্রমশ সাশ্রয়ী এবং ব্যবহারিক হয়ে উঠছে। টেসলার সাফল্য, সেইসাথে রিভিয়ান এবং লুসিডের মতো অন্যান্য ইভি নির্মাতাদের উত্থান, পরিচ্ছন্ন পরিবহণের জন্য ক্রমবর্ধমান ভোক্তা চাহিদার প্রমাণ দেয়। তবে এর প্রভাব যাত্রীবাহী গাড়ির বাইরেও বিস্তৃত। ব্যাটারি স্টোরেজ গ্রিডের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, যা সৌর এবং বায়ুর মতো নবায়নযোগ্য শক্তি উৎসগুলোকে আরও নির্ভরযোগ্যভাবে পাওয়ার গ্রিডে যুক্ত করতে সাহায্য করছে। ফ্লুয়েন্সের মতো সংস্থাগুলো বৃহৎ আকারের ব্যাটারি স্টোরেজ সিস্টেম স্থাপন করছে, যা নবায়নযোগ্য শক্তির বিরতি কমিয়ে একটি স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারে।
একটি শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু প্রযুক্তি ভেঞ্চার ফান্ডের অংশীদার এমিলি কার্টার বলেন, "দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়েছে। এটি এখন আর শুধু ভালো কিছু করার বিষয় নয়, লাভজনক ব্যবসা তৈরি করার বিষয়। আমরা এমন সব কোম্পানি দেখছি যারা শুধু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করছে না, সেই সাথে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে উন্নত পণ্য এবং পরিষেবা সরবরাহ করছে।"
ডিজিটাল অর্থনীতির শক্তিকেন্দ্র ডেটা সেন্টারগুলো একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি সুযোগও তৈরি করে। তাদের বিশাল বিদ্যুতের ব্যবহার কার্বন নিঃসরণে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। তবে, এগুলো এখন উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। ডেটা সেন্টারগুলোকে আরও বেশি জ্বালানি সাশ্রয়ী করার উপায়গুলো অনুসন্ধান করা হচ্ছে, যেখানে লিকুইড কুলিং এবং বর্জ্য তাপ পুনরুদ্ধারের মতো কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া, ডেটা সেন্টারগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, মাইক্রোসফট ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নেগেটিভ হওয়ার অঙ্গীকার করেছে এবং তাদের ডেটা সেন্টারগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে প্রচুর বিনিয়োগ করছে।
২০২৬ সালের দিকে তাকিয়ে বিনিয়োগকারীরা সতর্কতার সাথে আশাবাদী। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত থাকলেও জলবায়ু প্রযুক্তির অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যয় সুবিধা, টেকসই পণ্য এবং পরিষেবাগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং জলবায়ু ঝুঁকি সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা—সবকিছুই উদ্ভাবনের জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করছে।
আর্লি-স্টেজ স্টার্টআপগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর ডেভিড লি বলেন, "আমরা জলবায়ু প্রযুক্তির একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করছি। প্রাথমিক হইচই কমে গেছে এবং এখন আমরা দেখছি যে সত্যিকারের ব্যবসা তৈরি হচ্ছে। আগামী কয়েক বছর নির্ধারণ করবে কোন প্রযুক্তিগুলো বড় আকারে সম্প্রসারিত হবে এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।"
সামনের পথটি সহজ হবে না। প্রতিটি জলবায়ু প্রযুক্তি সফল হবে না, এবং পথে নিঃসন্দেহে কিছু বাধা আসবে। তবে ২০২৫ সালে যে স্থিতিশীলতা দেখা গেছে, তা থেকে বোঝা যায় যে জলবায়ু প্রযুক্তি টিকে থাকার জন্যই এসেছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, অর্থনৈতিক প্রণোদনা এবং পরিবেশগত সচেতনতা—এই তিনের সংমিশ্রণ একটি শক্তিশালী শক্তি তৈরি করছে, যা আগামী বছরগুলোতে উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগকে চালিত করবে। জলবায়ু প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ কোনো বিপর্যয় এড়ানো নয়, বরং একটি টেকসই এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment