ইরানের অর্থনীতি ধসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর সাথে সাথে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই সপ্তাহের শুরুতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে, কারণ ইসরায়েলের সাথে সংঘাতের সম্ভাব্য পুনরুত্থান নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণে ইরানের মুদ্রার মান দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে আসা সংকেত, যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ধরনের সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন করবেন বলে জানানো হয়েছে, অর্থনৈতিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
তেহরান এবং ইসফাহানের মতো প্রধান শহরগুলোতে মূলত কেন্দ্রীভূত বিক্ষোভে হাজার হাজার ইরানি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যম এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীরা সরকারি দুর্নীতির সমালোচনা করে এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে স্লোগান দেয়। যদিও ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিক্ষোভের কথা স্বীকার করেছে, তবে তারা এর ব্যাপকতা কমিয়ে দেখিয়েছে এবং অস্থিরতার জন্য "বিদেশী উস্কানিদাতাদের" দায়ী করেছে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে।
ইরানের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট একাধিক কারণের জটিল আন্তঃক্রিয়ার ফল। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে পুনরায় আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের তেল রপ্তানির ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে সীমিত করেছে, যা তাদের আয়ের প্রধান উৎস। নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে প্রবেশাধিকারকেও সীমিত করেছে, যা অর্থনীতিকে আরও সংকুচিত করেছে। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের ইরানি বিষয়ক অর্থনীতিবিদ ডঃ ফাতিমা আলাভি বলেছেন, "নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানি অর্থনীতিতে একটি ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে।" "এগুলো প্রধান শিল্পগুলোকে পঙ্গু করে দিয়েছে এবং সাধারণ ইরানিদের জীবন ধারণ করা অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন করে তুলেছে।"
অর্থনৈতিক দুর্দশার সাথে যুক্ত হয়েছে ইসরায়েলের সাথে সামরিক সংঘাতের ক্রমাগত হুমকি। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বহু বছর ধরে বিরাজ করছে, উভয় পক্ষই সাইবার হামলা এবং গোপন অভিযানের মাধ্যমে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত। একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা বিশেষভাবে জোরালো হয়েছে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিবৃতির পর, যেখানে তিনি ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই অনিশ্চয়তা ইরানের মুদ্রাকে আরও অস্থিতিশীল করেছে এবং পুঁজি flight কে উৎসাহিত করেছে, যা অর্থনৈতিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানি জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এই অঞ্চলে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে вторичные санкций এর হুমকির কারণে ইরানকে অর্থপূর্ণ অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ইইউ-এর ক্ষমতা সীমিত। ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতি প্রধানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, "ইরানের পরিস্থিতি গভীরভাবে উদ্বেগজনক।" "আমরা সমস্ত পক্ষকে সংযম অনুশীলন করার এবং বর্তমান সংকটের একটি কূটনৈতিক সমাধানের দিকে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।"
বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায়, ইরানি সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। দেশটির নাগরিকদের অর্থনৈতিক অভিযোগের প্রতি তারা কীভাবে সাড়া দেয় এবং জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয়, তার ওপর নির্ভর করবে দেশটির ভবিষ্যতের স্থিতিশীলতা। ইরান একটি গভীর অর্থনৈতিক পতন এবং সম্ভাব্য সংঘাতের বৃদ্ধি এড়াতে পারবে কিনা, তা নির্ধারণে আগামী দিন এবং সপ্তাহগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment