ইয়েমেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, যা দেশটির দক্ষিণে একটি সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি স্বাধীন দক্ষিণ ইয়েমেনি রাষ্ট্র ঘোষণার সম্ভাবনা, যা সৌদি আরব তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।
এই মতবিরোধ বিদ্যমান সংঘাতগুলোকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে সুদান এবং হর্ন অফ আফ্রিকাতে, যেখানে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রায়শই বিরোধী পক্ষগুলোকে সমর্থন করেছে। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে নামেমাত্র মিত্র হলেও, এই দুটি দেশের আঞ্চলিক স্বার্থ এবং কৌশল ক্রমশ ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি)-এর প্রধান সমর্থক, যা দক্ষিণ ইয়েমেনের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করছে। এসটিসি, যারা বন্দর শহর এডেন নিয়ন্ত্রণ করে, তারা বারবার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেনি সরকারের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, যাদেরকে সৌদি আরব সমর্থন করে। কৌশলগত বাব এল-মান্দেব প্রণালীতে নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার আকাঙ্ক্ষার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত এসটিসি-কে সমর্থন করে। এই প্রণালীটি বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ।
অন্যদিকে, সৌদি আরব তার প্রভাব বলয়ের অধীনে একটি ঐক্যবদ্ধ ইয়েমেন বজায় রাখতে আগ্রহী, কারণ দেশটি উত্তর দিকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। সৌদিরা আশঙ্কা করে যে একটি স্বাধীন দক্ষিণ ইয়েমেন তাদের নিজেদের সীমানার মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে উৎসাহিত করতে পারে এবং অঞ্চলটিকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।
২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেন একটি গৃহযুদ্ধে জড়িত, যখন হুতিরা রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সরকারকে উৎখাত করে। এই সংঘাত বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটগুলোর মধ্যে একটি তৈরি করেছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ ইয়েমেনি দুর্ভিক্ষ ও রোগের সম্মুখীন হচ্ছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সালে সরকারকে পুনরুদ্ধারের জন্য হস্তক্ষেপ করে, কিন্তু যুদ্ধ এখনও চলছে, যার কোনো স্পষ্ট সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভেদ ইয়েমেনের ইতিমধ্যেই অস্থির পরিস্থিতিতে জটিলতার আরেকটি স্তর যোগ করেছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন যে এই দুটি দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘাত দেশ এবং বৃহত্তর অঞ্চলের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এই বিরোধ মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তনশীল জোট এবং ক্ষমতার গতিশীলতাকেও তুলে ধরে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী অংশীদারিত্ব নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার দ্বারা পরীক্ষিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো উত্তেজনা কমাতে এবং সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment