বিবিসি নিউজের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া সংবাদদাতা জোনাথন হেড মিয়ানমারের একটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন, যখন দেশটি চলমান গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে যে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল, সেই জান্তার পরিকল্পিত নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে এই পরিদর্শনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পরিকল্পিত এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং মিয়ানমারের ভেতরের গণতন্ত্রপন্থী দলগুলোর দ্বারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। তাদের যুক্তি হলো, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল নয়। সামরিক বাহিনী এবং বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন ও সদ্য গঠিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধ ব্যাপক অস্থিতিশীলতা ও বাস্তুচ্যুতি তৈরি করেছে। অনেক অঞ্চলে স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের প্রবেশগম্যতা নেই, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
পূর্বে বার্মা নামে পরিচিত মিয়ানমারের একটি জটিল রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে, যা কয়েক দশক ধরে সামরিক শাসন ও জাতিগত সংঘাতের দ্বারা চিহ্নিত। ২০১১ সালে শুরু হওয়া একটি সংক্ষিপ্ত গণতান্ত্রিক উত্তরণ ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই অভ্যুত্থান ব্যাপক বিক্ষোভ এবং পরবর্তীতে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়ন শুরু করে, যার ফলে সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো গঠিত হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংস্থা (আসিয়ান) মিয়ানমারের সংকট নিরসনের চেষ্টা করেছে, কিন্তু সীমিত সাফল্যের সাথে। আসিয়ান নেতৃবৃন্দ এবং মিয়ানমারের জান্তার মধ্যে সম্মত হওয়া পাঁচ দফা ঐকমত্য এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়ে বিভক্ত, কিছু দেশ সামরিক শাসনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, আবার কেউ কেউ সংলাপ ও আলোচনার পক্ষে কথা বলছে।
জাতিসংঘ বারবার সহিংসতা বন্ধ এবং গণতন্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি সহ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে, যাঁকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। মিয়ানমারের উপর জাতিসংঘের বিশেষ দূত সংঘাত আরও বাড়ার এবং মানবিক সংকট গভীর হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। পরিকল্পিত নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি ততই অস্থির থাকছে, নিকট ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা কম।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment