ব্রিজিত বার্দো, ফরাসি অভিনেত্রী যিনি বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যৌন স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন, রবিবার ৯১ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর পশু অধিকার বিষয়ক ফাউন্ডেশন থেকে এএফপি (Agence France-Presse) -কে দেওয়া এক বিবৃতিতে তাঁর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয়, যদিও তাঁর মৃত্যুর সময় এবং স্থান উল্লেখ করা হয়নি।
বার্দো ১৯৫০ এবং ৬০-এর দশকে খ্যাতি অর্জন করেন, যা পশ্চিমা বিশ্বে উল্লেখযোগ্য সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের একটি সময় ছিল। তাঁর অন-স্ক্রিন ব্যক্তিত্ব এবং অফ-স্ক্রিন জীবন সেই সময়ের রক্ষণশীল প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, বিশেষ করে নারীদের যৌনতা সম্পর্কে। তিনি "অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড ওম্যান" (১৯৫৬)-এর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যা তাঁর তৎকালীন স্বামী রজার ভাদিম পরিচালনা করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রটি তাঁকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দেয় এবং একজন যৌন প্রতীক হিসেবে তাঁর ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে।
চলচ্চিত্রের কর্মজীবনের বাইরে, বার্দো ছিলেন একজন মডেল, গায়িকা এবং ফ্যাশন আইকন। তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত এবং বিদ্রোহী চেতনার শৈলী বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ট্রেন্ডকে প্রভাবিত করেছে। তিনি "বার্দো নেকলাইন" (off-the-shoulder style) জনপ্রিয় করেন এবং তাঁর চুলের স্টাইল ব্যাপকভাবে অনুকরণ করা হতো। তিনি বেশ কয়েকটি অ্যালবাম রেকর্ড করেছিলেন, যার মধ্যে সের্গ গেইনসবার্গের সাথে "বনি অ্যান্ড ক্লাইড" গানটি উল্লেখযোগ্য।
বার্দোর ব্যক্তিগত জীবন প্রায়শই তীব্র মিডিয়া সমালোচনার বিষয় ছিল। তিনি চারবার বিয়ে করেছিলেন এবং অভিনেতা ওয়ারেন বিটি এবং নিনো ফেরেরের সাথে তাঁর অনেক আলোচিত সম্পর্ক ছিল।
পরবর্তী বছরগুলোতে, বার্দো বিনোদন জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এবং পশু অধিকারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি "ব্রিজিত বার্দো ফাউন্ডেশন ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অফ অ্যানিম্যালস" প্রতিষ্ঠা করেন এবং পশু কল্যাণের একজন সোচ্চার সমর্থক হন। প্রায়শই হালাল পদ্ধতিতে পশু হত্যা এবং অভিবাসনের মতো বিষয়ে বিতর্কিত মতামত প্রকাশ করতেন। তাঁর স্পষ্টভাষিতা কখনও কখনও সমালোচনা এবং আইনি পদক্ষেপের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে ফ্রান্সে, যেখানে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য তাঁকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছিল।
বার্দোর legado (উত্তরাধিকার) জটিল। তাঁর সৌন্দর্য এবং সামাজিক প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করার ভূমিকার জন্য প্রশংসিত হলেও, পরবর্তী রাজনৈতিক মতামতের জন্য তিনি সমালোচিতও হয়েছেন। তবুও, সিনেমা, ফ্যাশন এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তাঁর প্রভাব অনস্বীকার্য। তাঁর ভাবমূর্তি আজও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ও পুনর্গঠিত হয়, যা তাঁকে একজন সাংস্কৃতিক আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment