বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, যা একসময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও মারাত্মক দূষণে জর্জরিত ছিল, তা বর্তমানে টেকসই হওয়ার পথে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদনে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে দেশটি এখন ২৬৮টি লিড (LEED) সার্টিফায়েড পোশাক কারখানার সঙ্গে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে, যা অন্য সকল দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিবর্তনটি এমন একটি শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা পূর্বে ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসের মতো মর্মান্তিক ঘটনার সাথে জড়িত ছিল, যেখানে ১,১৩৪ জন শ্রমিক নিহত এবং প্রায় ২,৫০০ জন আহত হয়েছিলেন, এবং বুড়িগঙ্গার মতো নদীর ক্রমাগত দূষণ, যা বস্ত্র উৎপাদনকারী রং, রাসায়নিক পদার্থ এবং ভারী ধাতু দ্বারা মারাত্মকভাবে দূষিত।
সবুজ অনুশীলনের দিকে এই পদক্ষেপে সম্পদ-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি গ্রহণ করা হয়েছে, যা বর্জ্য হ্রাস, পানি সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাতের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে ডিজাইন করা হয়েছে। ডাইং প্ল্যান্টগুলো ক্রমশ নিরাপদ রাসায়নিক ব্যবহার করছে, যেখানে ট্যানারিগুলো পরিষ্কার ট্যানিং পদ্ধতি বাস্তবায়ন করছে এবং নির্গমনের আগে বর্জ্য জল পরিশোধন করছে। কারখানাগুলো তাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে আরও বেশি শক্তি-সাশ্রয়ী এলইডি আলোতে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং ছাদের উপরে সৌর প্যানেল স্থাপন করছে।
পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি ভিত্তি, যা দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে, প্রধানত নারীদের কর্মসংস্থান দেয়। তবে, এর দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঐতিহাসিকভাবে পরিবেশ ও মানুষের জীবনের চরম ক্ষতির কারণ হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী, যা ঢাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, এই দূষণের প্রতীকে পরিণত হয়েছে, যেখানে পোশাক কারখানা থেকে নির্গত অপরিশোধিত বর্জ্য জল এর অবনতিতে অবদান রাখছে।
টেকসই হওয়ার এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ভোক্তাদের চাপ, শিল্পের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা এবং পরিচ্ছন্ন উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকারি বিধিবিধানসহ বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণে চালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এনজিওগুলো সবুজ অনুশীলন গ্রহণে ইচ্ছুক কারখানাগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হলেও, চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। পরিবেশ বিষয়ক বিধিবিধানের ধারাবাহিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং পুরো শিল্প জুড়ে টেকসই অনুশীলনের ব্যাপক গ্রহণকে উৎসাহিত করা চলমান অগ্রাধিকার। এই পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নির্ভর করবে সরকার, শিল্প, আন্তর্জাতিক সহযোগী এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে অব্যাহত সহযোগিতার ওপর, যাতে বাংলাদেশে আরও টেকসই ও দায়িত্বশীল পোশাক খাত গড়ে তোলা যায়।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment