ইয়েমেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি স্বাধীন দক্ষিণ ইয়েমেনি রাষ্ট্র ঘোষণার সম্ভাবনা। কূটনৈতিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই বিরোধের কারণে সৌদি আরব উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পদক্ষেপ তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
এই মতবিরোধ দক্ষিণ ইয়েমেনের অভ্যন্তরে একটি নতুন গৃহযুদ্ধ শুরু করার ঝুঁকি বহন করে, যা ইতিমধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। তাছাড়া, বিশ্লেষকরা মনে করেন যে এই সংঘাত ইয়েমেনের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা সুদান এবং হর্ন অফ আফ্রিকার মতো অঞ্চলে বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, যেখানে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রায়শই বিরোধী পক্ষগুলোকে সমর্থন করেছে।
বর্তমান উত্তেজনার মূল কারণ হলো ইয়েমেনের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যেখানে ২০১৫ সাল থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, প্রাথমিকভাবে জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তাদের সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে আনে এবং Southern Transitional Council (STC)-কে সমর্থন অব্যাহত রাখে, যা দক্ষিণ ইয়েমেনের স্বাধীনতার জন্য একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। সংযুক্ত আরব আমিরাত-সমর্থিত STC দক্ষিণে হুথিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
সৌদি আরব, হুথিদের বিরোধী হলেও, এমন যেকোনো পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক, যা ইয়েমেনের বিভক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। সৌদিরা একটি ঐক্যবদ্ধ ইয়েমেনকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তাদের আশঙ্কা, একটি স্বাধীন দক্ষিণ রাষ্ট্র একটি ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি করতে পারে এবং অঞ্চলের মধ্যে অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে উৎসাহিত করতে পারে।
ইয়েমেনে সৌদি-সমর্থিত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত-সমর্থিত বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ বারবার ইয়েমেনি সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে এবং আরও উত্তেজনা বৃদ্ধির মারাত্মক মানবিক পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। ইয়েমেনের যুদ্ধ ইতিমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহার ও বাস্তুচ্যুতির শিকার।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এই অঞ্চলে বৃহত্তর কৌশলগত ভিন্নতাকে প্রতিফলিত করে। ইরানীয় প্রভাব মোকাবিলার একটি সাধারণ লক্ষ্য উভয় দেশের থাকলেও, তারা প্রায়শই এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ভিন্ন পথ অনুসরণ করে। সংযুক্ত আরব আমিরাত স্থানীয় প্রক্সিগুলোকে সমর্থন এবং তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রসারের ওপর জোর দিয়েছে, যেখানে সৌদি আরব আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আরও কেন্দ্রীভূত পদ্ধতির ওপর জোর দিয়েছে।
ইয়েমেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগামী কয়েক সপ্তাহকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের উদ্বেগকে সমাধান করে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। তবে, গভীর বিভাজন এবং পরস্পরবিরোধী স্বার্থ একটি সমাধানকে অধরা করে রেখেছে, যা এই অঞ্চলে আরও সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment