ইয়েমেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, বিশেষ করে একটি স্বাধীন দক্ষিণ রাষ্ট্র ঘোষণার সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে। এই বিরোধ, যা বহু বছর ধরে চলে আসছে, একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে কারণ সৌদি আরব ইউএই-এর পদক্ষেপকে তার নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।
এই মতবিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি), ইয়েমেনের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী, যাদেরকে সমর্থন করে ইউএই। এসটিসি দক্ষিণ ইয়েমেনের স্বাধীনতা চায়, যা সৌদি আরবের মতে এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং তাদের নিজেদের সীমানার মধ্যে অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে উৎসাহিত করবে। বর্তমান উত্তেজনা দক্ষিণ ইয়েমেনের অভ্যন্তরে একটি নতুন গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা আঞ্চলিক অভিনেতাদের আকৃষ্ট করতে পারে এবং ইতিমধ্যেই দীর্ঘায়িত সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেন একটি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে আছে, যেখানে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে, যে সরকার সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সমর্থনপুষ্ট। ইউএই এই জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল, কিন্তু তারপর থেকে ইয়েমেনে তাদের সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছে এবং এসটিসিকে সমর্থন করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। কৌশলগত এই ভিন্নতা সৌদি আরবের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করেছে, যারা অন্তত নামে হলেও ইয়েমেনের ঐক্য রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সৌদি-ইউএই বিরোধ ইয়েমেনের বাইরেও বিস্তৃত, কারণ এই দুটি দেশকে প্রায়শই সুদান এবং হর্ন অফ আফ্রিকার মতো অন্যান্য আঞ্চলিক বিরোধে একে অপরের বিরোধী অবস্থানে দেখা যায়। এই প্রতিদ্বন্দ্বী স্বার্থগুলো মধ্যপ্রাচ্যের জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিবর্তনশীল জোটগুলোকে তুলে ধরে। ইয়েমেন সংঘাতের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দক্ষিণ ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা সুদূরপ্রসারী পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে একটি মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে এবং একটি ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি করতে পারে, যা চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো কাজে লাগাতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, এবং সৌদি আরব ও ইউএই উভয়কেই উত্তেজনা কমাতে এবং সংকটের একটি কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহগুলোতে এটা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ হবে যে দেশ দুটি তাদের মধ্যেকার পার্থক্য ঘোচাতে এবং ইয়েমেনের আরও বিশৃঙ্খলার দিকে যাওয়া ঠেকাতে পারবে কিনা।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment