সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে চার মাসব্যাপী সামরিক চাপ প্রয়োগের প্রথম মার্কিন স্থল হামলা হিসেবে যা ঘোষণা করেছিলেন, তার প্রায় এক সপ্তাহ পরেও ঘটনাটি ঘিরে বিস্তারিত তথ্য এখনো পর্যন্ত অপ্রতুল। সিএনএন এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সোমবারের শেষের দিকে জানায়, সিআইএ कथितভাবে ড্রোন ব্যবহার করে ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ নামক একটি স্ট্রিট গ্যাং কর্তৃক ব্যবহৃত একটি বন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
এই কথিত ড্রোন হামলা যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে চলমান ছায়া যুদ্ধের একটি সম্ভাব্য বৃদ্ধি নির্দেশ করে, যেখানে নিকোলাস মাদুরো ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপ এবং অভ্যন্তরীণ ভিন্নমত সত্ত্বেও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছেন। কথিত হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে তারিখ, সময় এবং সঠিক স্থান এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
এই ঘটনাটি একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঘটেছে। ভেনেজুয়েলা, যা একসময় তার বিশাল তেল মজুদের কারণে লাতিন আমেরিকার অন্যতম ধনী দেশ ছিল, মাদুরোর নেতৃত্বে মারাত্মক অর্থনৈতিক পতনের শিকার হয়েছে, যার ফলে ব্যাপক দারিদ্র্য, অতিমুদ্রাস্ফীতি এবং ব্যাপক অভিবাসন দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সত্তর লক্ষেরও বেশি ভেনেজুয়েলান দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, যা পুরো অঞ্চল জুড়ে একটি শরণার্থী সংকট তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে মাদুরোর সরকারের সমালোচনা করে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করার অভিযোগ এনেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপর নিষেধাজ্ঞা জোরদার করে, তেল শিল্পসহ অর্থনীতির মূল খাতগুলোকে লক্ষ্য করে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোকে ভেনেজুয়েলার বৈধ অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যদিও গুয়াইদোর সমর্থন তখন থেকে কমে গেছে।
ট্রাম্পের বর্ণনা অনুযায়ী, বর্তমান মার্কিন সামরিক অভিযান পূর্ববর্তী কৌশল থেকে একটি উল্লেখযোগ্য প্রস্থান। যদিও লাতিন আমেরিকাতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ইতিহাস রয়েছে, তবে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ এই অঞ্চলের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিণতি সহ একটি বড় ধরনের বৃদ্ধি হবে।
দক্ষিণ আমেরিকা সংবাদদাতা টিয়াগো রজেরোর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুদ্ধ মহড়ায় এর আগে মাদুরোর পতনের বিভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, যার কোনওটিই ভেনেজুয়েলার জন্য ভালো হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার শাসন পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন বিকল্প সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে, যা আরও অস্থিতিশীলতার সম্ভাবনা সম্পর্কে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ভেনেজুয়েলার সরকার এখনও পর্যন্ত কথিত ড্রোন হামলা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, মাদুরো ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে তার সরকারকে উৎখাত এবং ভেনেজুয়েলার তেল মজুদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে আসছেন। এই ঘটনাটি সম্ভবত দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং ভেনেজুয়েলার পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণ হতে পারে।
ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি এখনও অস্থির, দেশটি অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং এখন, ক্রমবর্ধমান মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকির সাথে লড়াই করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঘনিষ্ঠভাবে এই ঘটনার দিকে নজর রাখছে, অনেকে সংলাপ এবং সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছেন। দেশটির স্থিতিশীলতা এবং অঞ্চলের নিরাপত্তার উপর কথিত ড্রোন হামলার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনও দেখার বিষয়।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment