মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানের রিয়ালের রেকর্ড পরিমাণ দরপতনে সৃষ্ট বিক্ষোভ তৃতীয় দিনের মতো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় ইরান ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে। বিবিসির ফার্সি বিভাগ নিশ্চিত করেছে, তেহরানের গ্র্যান্ড বাজারের দোকানদারদের মধ্যে রবিবার শুরু হওয়া ধর্মঘটের কারণে প্রাথমিকভাবে সৃষ্ট অস্থিরতা এখন কারাজ, হামেদান, ক্বেশম, মালার্দ, ইস্ফাহান, কেরমানশাহ, শিরাজ এবং ইয়াজদসহ অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে।
খোলা বাজারে ডলারের বিপরীতে রিয়ালের ঐতিহাসিক দরপতন বিক্ষোভের তাৎক্ষণিক অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। মুদ্রার পতনের নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা না হলেও, পরিস্থিতির তীব্রতা ইরানি নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যা জনগণের আর্থিক কষ্টের কারণ হচ্ছে।
আন্দোলনগুলো ইরানের বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিক্ষোভের স্বীকৃতি এবং জনগণের অভিযোগ শোনার প্রতিশ্রুতিসহ সরকারের প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতির গুরুত্বের প্রতিফলন ঘটায়। প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশনা অস্থিরতা কমানো এবং অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধানের একটি প্রচেষ্টা ইঙ্গিত করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পদ থেকে মোহাম্মদরেজা ফারজিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ এবং আবদুলনাসের হেমমাতিকে তার স্থলাভিষিক্ত করার মাধ্যমে রিয়ালকে স্থিতিশীল করতে এবং মুদ্রাস্ফীতি রোধে লক্ষ্যযুক্ত আর্থিক নীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, তেলের দামের ওঠানামা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা সহ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এসব কারণ মুদ্রা অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার মান হ্রাসে অবদান রেখেছে। বর্তমান বিক্ষোভগুলো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের সক্ষমতা নিয়ে ইরানিদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।
সামনের দিকে তাকালে ইরানের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত রয়ে গেছে। অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা, মুদ্রা স্থিতিশীল করা এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ হ্রাস করার ক্ষেত্রে সরকারের সক্ষমতা আরও অস্থিরতা রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা এবং যথাযথ অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের সাফল্য দেশটির অর্থনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment