ইরানের অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান সংকটের সাথে লড়ছে, কারণ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানের রিয়ালের রেকর্ড দরপতনে সৃষ্ট বিক্ষোভ টানা তৃতীয় দিনের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। তেহরানের গ্র্যান্ড বাজারে রবিবার দোকানদারদের মধ্যে ধর্মঘটের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে শুরু হওয়া এই অস্থিরতা দ্রুত কারাজ, হামেদান, ক্বেশম, মালার্দ, ইস্পাহান, কেরমানশাহ, শিরাজ এবং ইয়াজদসহ একাধিক শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
খোলা বাজারে ডলারের বিপরীতে ইরানের রিয়ালের রেকর্ড দরপতন বিক্ষোভের তাৎক্ষণিক অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। মুদ্রার পতনের নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা না হলেও, পরিস্থিতির তীব্রতা ইরানি নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। সরকার বিক্ষোভের কথা স্বীকার করেছে এবং অভিযোগগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ইরানি অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বিক্ষোভ বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটায়, যা সম্ভাব্য সরবরাহ চেইন বিপর্যয় এবং ভোক্তা ব্যয় হ্রাসের দিকে পরিচালিত করে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন মুদ্রাস্ফীতির চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়, ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করে এবং আমদানি করা পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। এই অর্থনৈতিক অস্থিরতা ইরানে ব্যবসা পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করে, যা বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকে বাধা দেয়।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, তেল রাজস্ব হ্রাস এবং অব্যবস্থাপনা সহ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের অর্থনীতি অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। দেশটির তেল রপ্তানির উপর নির্ভরতা এটিকে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি মূল্যের ওঠানামার প্রতি সংবেদনশীল করে তুলেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি এবং বিদেশি বিনিয়োগের অভাবে অর্থনীতিকে বহুমুখী করার এবং দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর সরকারের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
সামনের দিকে তাকিয়ে, ইরানি অর্থনীতির ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি অনিশ্চিত। অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে এবং জনগণের মধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সরকারের সক্ষমতা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সাথে আলোচনা অর্থনীতিকে একটি প্রয়োজনীয় উৎসাহ যোগাতে পারে। তবে, উল্লেখযোগ্য সংস্কার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি ছাড়া ইরানের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো সম্ভবত অব্যাহত থাকবে, যা আরও সামাজিক অস্থিরতার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment