জলবায়ু প্রযুক্তি প্রত্যাশার বিপরীতে গিয়ে রাজনৈতিক প্রতিকূলতা এবং পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের মধ্যেও শুধু টিকে থাকেনি, উল্লেখযোগ্য স্থিতিস্থাপকতাও দেখিয়েছে। এর বিলুপ্তির ফিসফাস যখন চারিদিকে, তখন এই ক্ষেত্রটি নীরবে নিজেদের নতুন করে গুছিয়ে নিয়েছে, যেখানে সুযোগ এবং উদ্ভাবনের এক উর্বর ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে। ২০২৬ সাল জলবায়ু প্রযুক্তির জন্য কী নিয়ে আসে, সেই বিষয়ে ধারণা পেতে টেকক্রাঞ্চ ১২ জন শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলেছে।
২০২৫ সালকে প্রাথমিকভাবে জলবায়ু প্রযুক্তির সম্ভাব্য গোরস্থান হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। মার্কিন সরকারে জলবায়ু বিষয়ে সংশয়বাদের পুনরুত্থান এবং ইউরোপে পরিবেশগত বিধি-নিষেধ শিথিল হওয়ার কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তবে, ডেটা অন্য কথা বলছে। সিটিভিসি-র মতে, জলবায়ু এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় আশ্চর্যজনকভাবে স্থিতিশীল ছিল, যা এই খাতের অন্তর্নিহিত শক্তির প্রমাণ।
এই অপ্রত্যাশিত স্থিতিস্থাপকতার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অনস্বীকার্য এবং ক্রমবর্ধমান হুমকি স্থিতিশীল সমাধানের চাহিদা তৈরি করে চলেছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, অনেক জলবায়ু প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে, যা জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্পগুলির চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক, এমনকি উন্নত হয়ে উঠেছে। সৌর, বায়ু এবং ব্যাটারি প্রযুক্তির নাটকীয় মূল্য হ্রাস বিশেষভাবে পরিবর্তনমূলক হয়েছে, যা শিল্পের জন্য একটি শক্তিশালী অনুঘটক তৈরি করেছে।
গ্রিন ইনোভেশনস ফান্ডের অংশীদার সারাহ জোনস ব্যাখ্যা করে বলেন, "আমরা পরিচ্ছন্ন জ্বালানির অর্থনীতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন দেখছি।" "সৌর এবং বায়ু এখন প্রায়শই বিদ্যুতের সস্তা উৎস, এবং ব্যাটারি স্টোরেজ দ্রুত আরও সাশ্রয়ী হয়ে উঠছে। এটি শুধু ভালো করার বিষয় নয়; এটি স্মার্ট বিনিয়োগ করার বিষয়।"
এই অর্থনৈতিক কার্যকারিতা বিনিয়োগকারীদের একটি নতুন ঢেউকে আকৃষ্ট করছে, যারা পরোপকারিতার চেয়ে উল্লেখযোগ্য রিটার্নের সম্ভাবনা দ্বারা বেশি অনুপ্রাণিত। টেসলার মতো কোম্পানি, যারা তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং শক্তি সঞ্চয় সমাধানের মাধ্যমে জলবায়ু প্রযুক্তি থেকে যথেষ্ট মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা দেখিয়েছে।
তবে, একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের পথ চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। সব জলবায়ু প্রযুক্তি সৌর এবং বায়ুর মতো একই পথে চলবে না। কিছু প্রযুক্তিকে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হতে উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বা নীতিগত সহায়তার প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ একটি ব্যয়বহুল এবং জটিল প্রযুক্তি, যদিও এক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হচ্ছে।
ক্লিন ফিউচার ভেঞ্চার্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেভিড লি বলেন, "কার্বন ক্যাপচার এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে ভারী শিল্পকে কার্বনমুক্ত করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।" "একে একটি বহুল ব্যবহৃত সমাধানে পরিণত করতে আমাদের আরও উদ্ভাবন এবং খরচ কমাতে হবে।"
ডিজিটাল অর্থনীতির মেরুদণ্ড ডেটা সেন্টারগুলি জলবায়ু প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। এই শক্তি-intensive সুবিধাগুলি তাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে নতুন সমাধান খুঁজে বের করছে, যার মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার, শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নতুন কুলিং প্রযুক্তি তৈরি করা। ডেটা সেন্টারগুলির পরিবেশগত প্রভাব কমাতে সাবমার-এর মতো কোম্পানি, যারা ডেটা সেন্টারগুলির জন্য ইমারসন কুলিং সিস্টেম সরবরাহ করে, তারা আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
২০২৬ সালের দিকে তাকিয়ে বিনিয়োগকারীরা জলবায়ু প্রযুক্তির ক্রমাগত বৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী, তবে তারা কৌশলগত বিনিয়োগ এবং সহায়ক নীতির প্রয়োজনীয়তাও স্বীকার করেন। আর্থ ক্যাপিটালের প্রিন্সিপাল মারিয়া রদ্রিগেজ বলেন, "আমাদের এমন প্রযুক্তির ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত যা দ্রুত প্রসারিত হতে পারে এবং নিঃসরণের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।" "এর মানে হল শক্তি সঞ্চয়, স্থিতিশীল কৃষি এবং বিকল্প উপকরণগুলির মতো ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ করা।"
টেকক্রাঞ্চ যে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলেছে, তারা সবাই একমত যে জলবায়ু প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, সহায়ক সরকারি নীতি এবং স্থিতিশীল সমাধানের অর্থনৈতিক সুবিধা সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতার ওপর নির্ভর করে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্তর্নিহিত চালিকাশক্তি এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানির অর্থনৈতিক সুযোগ সম্ভবত শক্তিশালী থাকবে, যা নিশ্চিত করবে যে জলবায়ু প্রযুক্তি আগামী বছরগুলোতে একটি প্রাণবন্ত এবং গতিশীল খাত হিসেবে অব্যাহত থাকবে। গল্পটি সম্ভাব্য বিলুপ্তি থেকে সতর্ক আশাবাদের দিকে সরে গেছে, যা বাস্তব অগ্রগতি এবং উদ্ভাবক ও বিনিয়োগকারীদের অটল প্রতিশ্রুতি দ্বারা চালিত।
Discussion
Join the conversation
Be the first to comment